
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নাটোরের চাষ করা মাছ যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে ৫০ মেট্রিক টন, দুবাই ১০০ মেট্রিক টন এবং ভারতে ১৫০ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানি করা হয়েছে। তাছাড়া গত তিন বছরে ১ হাজার কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।
সরকারি-বেসরকারি জরিপ মতে, গত তিন বছরে কার্প এবং মিশ্র প্রজাতির প্রায় ৬০ হাজার টন মাছ অন্তত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন এখানকার খামারিরা।
উপজেলা মৎস্য অফিস, স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী উপজেলায় মোট পুকুর রয়েছে ৭ হাজার ৭৫৭টি। তবে বাস্তবে রয়েছে এই সংখ্যা আরও বেশি। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, সিলভার, বিগহেড, গ্রাসকার্প, সরপুটি, বাটা, রায়েক এবং দেশীয় প্রজাতির মধ্যে কই, শিং, মাগুর, পাবদা, টেংড়া, গোলশা, মোয়া, চিতল মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। পুকুরে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য সমবায় সমিতিও। এই সমিতির সদস্য হয়েছেন উপজেলার মাছচাষীরা।
গুরুদাসপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন চন্দ্র সাহা বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মাছ উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন। পরের অর্থ বছরে তা বেড়ে ১৬ হাজার ৬০ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। এছাড়া ২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৬ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সরকারিভাবে।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, ছিলভার, ব্রিগেড, গ্রাস কার্প জাতের মাছ চাষ হয়। একইসঙ্গে প্রতিটি পুকুরে নিবিড় এবং আধা নিবিড় দুই পদ্ধতিতে মিশ্র হিসেবে কই, শিং, পাবদা, গুলসা-টেংড়াসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। চলতি অর্থ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে ৫০ মেট্রিক টন, দুবাই ১০০ মেট্রিক টন এবং ভারতে ১৫০ মেট্রিক টন মিশ্র প্রজাতির সুস্বাদু পাবদা, রই-কাতলা, শিং-মাগুড়সহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ রপ্তানি করা হয়েছে।
বিদেশে মাছ রপ্তানি করা চাষি আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশের মাছের ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে নিয়মিতই পাবদা, শিং ও পাঙ্গাশ মাছ ভারতের বাজারে বিক্রি করি। এতে আমরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছি। আগামীতে অন্যান্য প্রজাতির মাছও বিদেশে রপ্তানি করার ইচ্ছা রয়েছে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অন্তত ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। মূলত এসব জমিতেই বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুর গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত ৯টি নদী, ৩টি খাল, ৬টি বিল থেকে বছরে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন এবং ৩০টি প্লাবন ভূমি থেকে ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন ও অন্যান্য জলাশয়ের মাছ উপজেলার অভ্যন্তরে বাজারজাত করা হয়। এছাড়া চাষের উৎপাদিত সব মাছই সারাদেশের বিভিন্ন আড়তে বিপনন করেন চাষীরা।
মাছচাষি রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, আমরা পোনা মাছ চাষ করি না। নূন্যতম এক কেজির ওপরে কার্প প্রজাতির মাছ ছাড়া হয় চাষের জন্য। ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যেই মাছগুলো কমপক্ষে আড়াই থেকে সাড়ে ১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আকারভেদে এসব মাছের পাইকারি বাজারদর কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৫০০টাকা।
গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, সম্প্রতি মৎস্য বিভাগের ডিজি গুরুদাসপুরে এসেছিলেন। মাছের চাষ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি, বাণিজ্যিকরণসহ নানা বিষয়ে চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় গুরুদাসপুরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি। চাষীদের সুবিধার জন্য অচিরেই এখানে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সূত্র: ইত্তেফাকক