ঢাকা   মঙ্গলবার
১৪ অক্টোবর ২০২৫
২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

আলুর দামে ধস, ব্যাপক লোকসানের মুখে কৃষকরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১১ অক্টোবর ২০২৫

আলুর দামে ধস, ব্যাপক লোকসানের মুখে কৃষকরা

আলুর দামে ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষকরা। উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা হলেও আলু বিক্রি করে কৃষকরা হাতে পাচ্ছেন মাত্র ১৫ টাকা। অথচ ২৭ আগস্ট হিমাগার পর্যায়ে আলুর কেজি ২২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু এ দামে হিমাগার থেকে কেউ আলু কিনছেন না। ফলে পড়ে আছে এক লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু। 

এদিকে জেলার একমাত্র হিমাগার ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজের প্রধান হিসাব ব্যবস্থাপক আবুল হাসনাত বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কৃষকরা আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত হিমাগারে আলু সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপর হিমাগারের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে পড়ে থাকা আলুর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়দায়িত্ব কৃষকের। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী মোন্নাফ আলী, মকছেদ আলী, হারুন মিয়া বলেন, আলুর দাম বাড়লে সরকারি সংস্থাগুলো দাম নিয়ন্ত্রণ করতে নামে। কিন্তু দাম পড়ে গেলে ব্যবসায়ীদের কোনো খোঁজখবর রাখে না। খুচরা বা পাইকারি ১৫ টাকা কেজিতেও কেউ আলু কিনছেন না। কয়েক দিন পর হিমাগারেও রাখতে পারব না। আলু নিয়ে কী করব? 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এক হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু আবাদ হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ টন। দিনাজপুরের দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট এই পাঁচ উপজেলার একমাত্র হিমাগার ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজ। এই হিমাগারে ৫৫ কেজি ওজনের বস্তায় এক লাখ ৮০ হাজার বস্তা (প্রায় ১১ হাজার টন) আলু সংরক্ষণ আছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হিমাগার থেকে বের হয়েছে ৬০ হাজার বস্তা। রয়ে গেছে ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা। গত বছর এ সময়ের মধ্যে ৭০ হাজারেরও বেশি বস্তা আলু বের হয়েছিল। বাজারে চাহিদা কম থাকায় হিমাগার থেকে কৃষকরা আলু নিতে আসছেন না।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সরকার গত ২৭ আগস্ট হিমাগার গেটে আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণাও দেয়। কিন্তু কৃষকরা হিমাগার থেকে প্রকার ভেদে ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে আলু বিক্রি করছেন। তারা আরও বলেন, বীজ, সার, কীটনাশক, জমির ভাড়া পরিবহন খরচসহ ৫৫ কেজির এক বস্তা আলু উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় এক হাজার ৩২০ টাকা। এতে কেজি প্রতি আলুর দাম হয় ২৪ টাকা। অথচ সরকার ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ দামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। গেটে ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজি আলুতে ৮ থেকে ৯ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

আলু চাষি একরামুল হক বীজ আর বাড়ির খাওয়ার জন্য ৯ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। গত মঙ্গলবার চার বস্তা আলু বের করেছেন। দাম কমে যাওয়ায় অবশিষ্ট পাঁচ বস্তা বের করতে সাহস পাচ্ছেন না। আরেক আলুচাষি আশিকুর রহমান আট বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। তিনিও মঙ্গলবার দুই বস্তা আলু বের করেছেন। অবশিষ্ট ছয় বস্তা আলু আদৌ বের করবেন কিনা ভাবছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আবদুল্লাহ মোস্তাফিন বলেন, সরকারিভাবে আলু কেনা হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। তবে বাজারে আলুর দাম কমেছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

উপপরিচালক বিএডিসি দিনাজপুর (বীজ আলু) মো. আবু জাফর বলেন, সরকারিভাবে এখনও হিমাগারের গেট থেকে আলু কেনা হয়নি। কবে কেনা হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি এই কৃষি কর্মকর্তা।