ঢাকা   বৃহস্পতিবার
০৯ অক্টোবর ২০২৫
২৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ৮ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও দুই লাখ ২০ হাজার টন গম জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে আমদানি করা হচ্ছে। এ গমের প্রতি টনের দাম পড়ছে ৩০৮ ডলার। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বৈঠকে চাল, সার আমদানিসহ আরও বেশ কিছু ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে অনুমোদন হওয়া প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, জি-টু-জি পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্র হুইট সমিতির অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল থেকে এ গম কিনবে খাদ্য অধিপ্তর। এ ক্ষেত্রে প্রতি টন গমের দাম ধরা হয়েছে ৩০৮ মার্কিন ডলার। ২০ লাখ ২০ টন গম কিনতে ব্যয় হবে স্থানীয় মুদ্রায় ৮২৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। 

এর আগে গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। তখন প্রতি টন গমের দাম ধরা হয় ৩০২ দশমিক ৭৫ ডলার। সে হিসাবে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কিনতে ব্যয় ধরা হয় ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর দর কষাকষিতে সুবিধা পেতে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারিভাবে গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশটির গম রপ্তানিকারক সমিতি বা ইউএস হুইট সমিতির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার। এর আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানি করবে। সরকার অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে গম আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনতে প্রতি টনে তার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ ডলার বাড়তি খরচ করতে হয়। গত ২৩ জুলাই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেশি দামের বিষয়টি স্বীকারও করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো।

বৈঠকে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। দেশটির এম/এস-বগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই চাল কেনা হবে। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে চাল আনতে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। প্রতি টনের দাম ধরা হয়েছে ৩৫৯ দশমিক ৭৭ ডলার। দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে চীন, কানাডা ও সৌদি আরব থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার প্রস্তাবসহ আরও কিছু ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন হয়। 

এদিকে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্যশস্যের মজুতের ব্যাপারে সরকার খুব সতর্ক। এখন কোনো সংকট নেই। তবে সরকারের মজুত বেশি হলে ভালো হয়। এ কারণে চাল ও গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে দেশে দারিদ্র্যের হার খানিকটা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তাত্ত্বিক দিকে এখন যাব না। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, দারিদ্র্য আছে–এগুলো বলতে হলে অনেক বক্তব্য দিতে হবে। আমি তো জানি কীভাবে ওরা দারিদ্র্য পরিমাপ করে। পাঁচ হাজার লোকের টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নিয়ে বললেন, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। আমাকে একজন বলেছেন, স্যার, আপনি একটা পেপার লেখেন, একটা ফার্ম ২০ হাজার জনের জবাব দিয়ে দেবে কালকের মধ্যে। তবে দারিদ্র্য নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে, এটি আমি স্বীকার করি।’

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতির হার ১১-১৪ শতাংশ ছিল। সেখান থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। আমরা মোটামুটি একটু আত্মবিশ্বাসী।’ 

দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চীন থেকে ২০টি যুদ্ধজাহাজ কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের আসন্ন বার্ষিক সম্মেলন প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের পাইপলাইনে আরও কিছু অর্থ আছে। এগুলো নিয়ে সম্মেলনে কথা হবে। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতনকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটি পরে একসময় আমি দেখব। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে একসময় আমি বলব।’