
চলতি বছর দিনাজপুরে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দিনাজপুরের বেদানা লিচু জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় লিচুর সুনাম এখন বিশ্বজুড়ে। তাই এবারেও টানা তৃতীয় বছরের মতো বিদেশে রপ্তানি হবে লিচু। যাতে লিচু ঘিরে বাণিজ্য হবে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার।
দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো ধারণ করেছে লাল বর্ণ। সবুজ পাতার ফাঁকে লাল লিচু যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। জেলার বিভিন্ন বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না টু, চায়না থ্রি, মোজাফফরী, কাঠালিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু।
গতবছর অতিরিক্ত গরমে এই জেলায় নষ্ট হয়েছিল লিচুর দানা। এছাড়া ঝড় ও অতি বৃষ্টিতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগান। যাতে বেশিরভাগ বাগানিকে গুণতে হয়েছে লোকশান। কিন্তু এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন যেমন বেশি তেমনি লিচুর আকারও কয়েক বছরের তুলনায় হয়েছে বড়। বর্তমানে প্রতিটি বাগানেই চলছে লিচু নামানোর ধুম। বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন পাইকাররা।
বাগানিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এবার একটু লাভবানের দিকে। গতবছরে লোকসান ছিল, এবার একটু উঠে আসছে। এবছর আবহাওয়াটা ভালো। বৃষ্টি, বাদল বেশি। সেজন্য ফলনটাও ভালো হয়েছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘অন্যান্য বছর লিচু পেকে যায়। কিন্তু এ বছর লিচু পেকে যায়নি। আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন লিচুর ফলন একটু কমে গেছে কিন্তু চাহিদা বেড়ে গেছে।’
বাগান থেকে লিচু সংগ্রহের পর ট্রাক আর ভ্যানে সেগুলো পৌঁছে যাচ্ছে শহরের পাইকারি ফলের আড়তে। বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুমের মাঝামাঝি হওয়ায় বাজারে বেড়েছে সরবরাহ একইসঙ্গে বেড়েছে দামও। এছাড়া বেড়েছে অনলাইনে লিচু বিক্রিও।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এবার অত্যধিক ফলন হয়েছে। আর সারাদেশের সব জায়গার মানুষ দিনাজপুরে লিচু নিতে আসে। দাম এজন্যই বেশি। সব জায়গা থেকে পার্টি আসছে তারা বেশি দামে কিনছে।’
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি এখন বিশ্বজুড়ে। এ বছর মে মাসে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দিনাজপুরের বেদানা লিচু। তাই বিশ্ব বাজারে বেড়েছে চাহিদাও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে লিচু রপ্তানি করেছিল গ্লোবাল ট্রেড এক্সপোর্টার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছর থেকে ইংল্যান্ডে রপ্তানি করছে স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড। এবছরও রপ্তানি করবে তারা। পাশাপাশি চীনেও রপ্তানি হওয়ার কথা রয়েছে বেদানা লিচু।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বছর এ জেলায় পাঁচ হাজার ৪৯১ হেক্টর জমির ১০ হাজার ৪০০ বাগানে লিচু বাগান রয়েছে। যেখান থেকে লিচু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার টন। যাতে এই খাতে বাণিজ্য হবে ৭০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যে বাজারমূল্য, তাতে ৭০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার বাজার হবে। কৃষকরাও আনন্দিত-খুশি। তারা এই পণ্যটি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। ইংল্যান্ড, চীনে এটার চাহিদা রয়েছে। বিগত বছরগুলোতেও আমরা দিনাজপুরের লিচু বাইরে রপ্তানি করতে পেরেছি। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এটি আরও সম্প্রসারিত হবে।’
এছাড়া গত দশ বছরে এই জেলায় লিচুর আবাদ বেড়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর। বর্তমানে ১০ জাতের লিচু পাওয়া গেলেও গবেষণা চলছে নতুন জাত উদ্ভাবনে।