যমুনার বুক জুড়ে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে যে বিশাল পলিমাটি জেগে ওঠে, সেখানে ধীরে ধীরে গজিয়ে ওঠে কাইশার সবুজ ঘাস। সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পর এই কাইশার সবুজ রঙ যেন এক নতুন প্রাণ ঢেলে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সবুজ ঘাস সোনালী রঙে মিশে যায়, আর চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের জন্য তা হয়ে ওঠে জীবিকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বন্যার পানি নামার কিছুদিন পরই কাইশা এক থেকে দেড়ফুট লম্বা হয়ে ওঠে। তখন থেকেই স্থানীয় কৃষকরা এটি সংগ্রহ শুরু করেন। ছোট কাইশা গুলো সাধারণত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু বাজারেও এর চাহিদা কম নয়। হেমন্তের সময় কাইশার ফুল আসলে পুরো চর যেন সাদা আকাশে ভেসে ওঠে, একটি চোখে পড়ার দৃশ্য।
ছোট কাইশা কেটে আঁটি বানিয়ে দিনে শেষে কৃষকরা তা মাথায় বা ঘোড়ার গাড়িতে করে নদীর ঘাটে নিয়ে যান। নৌকায় তুলে যমুনা পাড়ি দিয়ে বাজারে পৌঁছে, এক সপ্তাহ শুকানোর পরে বিক্রি হয়। স্থানীয় হাটে বিক্রি করে তারা প্রতিটা আঁটির জন্য ২০ টাকা পান। বড় কাইশা ঘরের বেড়া বা বাগানের সীমানা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
চরের মানুষদের জন্য কাইশা শুধু পণ্য নয়, এটি জীবিকার মূল উৎস। ফুলজোড় চরের বারিক মিয়া বলেন, ছোট কাইশা গরুকে খাওয়াই, বড় গুলো কেটে শুকিয়ে বাজারে বেচি। বিক্রি করা টাকাই আমাদের সংসার ঘুরায়।
সানবান্ধা চরের করিম শেখ, তেকানি গ্রামের আচফুল নেছা ও বদিউজ্জামান ব্যাপারি সবাই জানান, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং ভ‚মিহীন ছিন্নমূল মানুষরা কাইশা বিক্রির টাকায় নিজেরা সংসার চালান।
সাবেক ইউপি সদস্য মোকলেছুর রহমান বলেন, চরের মানুষ বছরের চার থেকে পাঁচ মাস কাইশা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক কাইশা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গ্রামে গিয়ে ডালা, ঝাঁকা, ফুলদানীসহ নানা ব্যবহার্য জিনিসে রূপান্তরিত হয়। শুনেছি, অনেক কাইশা দেশের বাইরে পর্যন্ত যাচ্ছে।
কাইশার ছোট্ট আঁটি যেন চরের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সাহায্য করছে—প্রতিদিনের খাটুনি আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। এই ছোট্ট ঘাসের টানে বাঁচে এক পুরো সম্প্রদায়।























