ঢাকা   শুক্রবার
২৪ অক্টোবর ২০২৫
৮ কার্তিক ১৪৩২, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

দেশেই বালাইনাশক উৎপাদন: কৃষিতে স্বনির্ভরতার নতুন দিগন্ত

Staff Correspondent

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৯:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

দেশেই বালাইনাশক উৎপাদন: কৃষিতে স্বনির্ভরতার নতুন দিগন্ত

ঢাকা: দেশের কৃষি খাতে দীর্ঘদিনের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে স্থানীয়ভাবে সব ধরনের বালাইনাশক ও কীটনাশক উৎপাদন করা যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন বছরে হাজার কোটি টাকার আমদানি নির্ভরতা কমবে, তেমনি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কীটনাশক রপ্তানির নতুন সুযোগও তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা) ও ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির সুযোগ তৈরিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে: ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মডেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তার অধীন দপ্তরের মাধ্যমে বালাইনাশকের উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানি, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলবে। এতে স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন সম্ভব হবে এবং দেশে একটি বিকল্প শিল্প খাত তৈরি হবে।

 স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে, বালাইনাশকের কাঁচামাল আমদানি সহজ ও শুল্ক সুবিধা প্রদানের জন্য এসব কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হবে।

বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজারের আকার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল বাজারের মাত্র ৪ শতাংশ দেশীয় উৎপাদকদের দখলে। বাজারের বাকি ৯৬ শতাংশই আমদানি-নির্ভর, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ দখল করে আছে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি, আর ৪১ শতাংশ আমদানি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সিনজেনটা বাংলাদেশ, বায়ার ক্রপসায়েন্স, ইউপিএল, বিএএসএফ ও এফএমসি করপোরেশনের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে সিনজেন্টার বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যার ৪৬ শতাংশ মালিকানা রয়েছে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের হাতে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় উৎপাদন নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রধান কারণ ছিল শুল্ক বৈষম্য। ফিনিশড পণ্য আমদানিতে শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ, অথচ কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামালে ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে এগিয়ে আসতে পারবে। একই সঙ্গে, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হলে কৃষকের কাছে বালাইনাশকের দাম কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাতীয় স্বার্থে নেওয়া এই উদ্যোগ কৃষি খাতে আত্মনির্ভরতা ও শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।