
ফেনী জেলার পাঁচগাছিয়ায় হর্টিকালচার সেন্টার আলু বোখরা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। এ হর্টিকালচার সেন্টারের সহায়তায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি ও বাণিজ্যিকভাবে দুর্মূল্য ও দুর্লভ এ মসলা জাতীয় ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষি উদ্যোক্তারা।
বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, আকিকাসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে পোলাও, বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, আচারসহ নানা পদের খাবারে মসলা হিসেবে আলুবোখারা অত্যাবশ্যক উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বাদে ভিন্নতা আনতে মসলা জাতীয় এ ফলের বহুবিধ ব্যবহার আছে। ফলটি ব্যাপকভাবে পরিচিত হলেও দেশীয় পরিবেশে এ ফলের গাছ খুব একটা দেখা যায় না।
এখন পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শুকনা বা প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় আলুবোখারা এ দেশে আমদানি করা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে বাড়ির আঙিনায় কেউ কেউ আলুবোখারা গাছ রোপণ করে সফলও হয়েছেন। সম্প্রতি ফেনী হর্টিকালচার সেন্টার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলু বোখারা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে ।
জেলা হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক নয়ন মনি সূত্রধর বলেন, আলুবোখারা মূল্যবান মসলা জাতীয় ফল। ২০২০ সালে পাকিস্তান থেকে তিনটি মাতৃ গাছ সংগ্রহ করে ফেনী হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করা হয়। তিনটি গাছই সফলভাবে বেড়ে উঠে এবং পর্যায়ক্রমে গাছে ফুল ও ফল আসে।
তিনি বলেন, গত ৪ বছরে তিনটি গাছ থেকে ৫০ টি চারা উৎপাদন করে তা কৃষি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে হর্টিকালচার সেন্টারের তিনটি গাছে ফল উৎপাদন হচ্ছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে চারা উৎপাদন করে উচ্চ মূল্যের মসলা চাষের বিস্তার ঘটানো হবে। এতে করে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত এ ফলের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি জানান, যে কেউ নিজের বাড়ির আঙিনায় লাগানো একটি আলু বোখারা গাছ থেকে বছরে নিজের পরিবারের চাহিদা মতো ফল সংগ্রহ ও তা বাজারে বিক্রি করতে পারবে। ভালো মাটি ও আলো বাতাস পেলে একটি গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া যাবে।
আলু বোখারার কোনোটির রং লাল, কোনোটি গাঢ় খয়েরি। মাঝারি আকারের বরইয়ের মতো দেখতে আলুবোখারা ফলগুলো গাছের ডালের অগ্রভাগে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে ।
ফলগুলো পুরোপুরি গোলাকার হলেও বোঁটা থেকে শেষ পর্যন্ত একপাশে কিছুটা খাঁজকাটা। পাকা অবস্থায় টক মিষ্টি এবং পাকার শুরুতে স্বাদ কিছুটা আমলকীর মতো। ফলটি পাকলে পুরোপুরি গাঢ় খয়েরি রং ধারণ করে।
ফেনী হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আলুবোখারা গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর জুন মাসের শুরুর দিকে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল ধরা শুরু করলে সব পাতা ঝরে যায়। এ সময় ফুলভর্তি গাছ অন্য রকম সৌন্দর্য ধারণ করে।
তিনি আরো বলেন, এই হর্টিকালচার সেন্টারে আমরা আপাতত আলু বোখারার চারা উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কৃষকদের আলুবোখারা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু মাতৃ গাছগুলো থেকে কলম সংগ্রহের জন্য প্রতিবছর ডাল কাটা হচ্ছে তাই ফল আপাতত কম আসছে। তারপরও এখানে বছরে অন্তত এক মণ ফল উৎপাদন হয়।
স্থানীয় বাজারে আলু বোখারার দাম ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে বিক্রেতার ধরন অনুযায়ী এই দাম সামান্য কম বেশি হতে পারে।
আলু বোখারা সাধারণত ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে জন্মে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক। তবে ভারতের কাশ্মীর, হিমালয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানে প্রচুর পরিমাণে আলু বোখারার চাষ হয়।