
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শিলাবৃষ্টিতে কৃষকদের পাট, বোরো ধান ও তিলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর করছে কৃষি বিভাগ।
আজ (বুধবার, ৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী। এর আগে, সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে হঠাৎ আট থেকে দশ মিনিট বৃষ্টি ও ব্যাপক শিলাবর্ষণ হয়। এতে এই এলাকার চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন।
এ ছাড়া ২৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। সেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। জেলার শুধু বোয়ালমারীতেই শিলাবৃষ্টি পড়ায় তিন হেক্টর জমির পাট এবং শূন্য দশমিক ১৮ হেক্টর জমির বোরো ধান শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও তিল ও মরিচেরও ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে বুধবার সকালে বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের নয়নীপাড়া ও উমরনগর এবং শেখর ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও তেলজুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাট, ধান, তিল ও মরিচের ফসল। এসব ফসলের মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে পাটের ডগা ভেঙে পড়ে গেছে মাটিতে। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা অবস্থায় থাকা বোরো ধান জমিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জমিতে ধানের শীষ ভেঙে পড়েছে। এসব কারণে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। চাষিরা অনেকেই এনজিও থেকে লোন নিয়ে এবং জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন।
স্থানীয় কৃষক ইউসুফ শেখ বলেন, ‘বৃষ্টির সাথে আট থেকে দশ মিনিট শিলা পড়ে। বৃষ্টি থামলে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ক্ষেতের পাটের বেশি অংশের মাথা ভেঙে গেছে এবং নুইয়ে পড়েছে। আমি, আমার ভাই ও বাবা মিলে ১৯ পাখি জমিতে পাট চাষবাস করেছি। ক্ষেতের ফসলের প্রায় সব পাটের আগা ভেঙে শেষ হয়ে গেছে। এমন ক্ষতি হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট। এখন এই জমিতে অন্য ফসল আবাদেরও সুযোগ নেই।’
আরেক চাষি মান্নান শেখ বলেন, ‘আট পাখি জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। আবাদে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সব শেষ হয়ে গেছে। টাকাও গেলো, ফসলও গেলো।’
আরেক চাষি আরশাদ মোল্লা বলেন, ‘গতরাতে ক্ষেতের চিন্তায় দুই চোখের পাতা এক করতে পারি নাই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাট এবং ধানের আবাদ করেছিলাম। আর কিছুদিন পর ধান ঘরে তুলবো এমন সময় এমন ক্ষতি হয়ে গেলো। ধানের কিছু অংশ বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চেয়েছিলাম আর বাকি অংশ নিজেরা খেয়ে বাঁচতাম, এখন সবই শেষ হয়ে গেলো।’
বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী জানান, ‘শিলাবৃষ্টির পরেই ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে পাট ও ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। এ উপজেলার গুনবহা, শেখর, পৌরসভার আংশিক এবং সদর ও চতুল ইউনিয়নে পাট, ধান ও তিল ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকার কাজ চলছে। তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘বোয়ালমারী উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে তিন হেক্টর জমির পাট আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগাম পাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে পাট ছোট থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। দ্রুত ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে