ঢাকা   সোমবার
৩০ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২, ০৩ মুহররম ১৪৪৭

বৃষ্টি হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৮, ৮ মে ২০২৪

বৃষ্টি হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ

বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) মা মাছ। বিশেষজ্ঞরা একে নমুনা ডিম বললেও সংগ্রহকারীরা বলছেন, ডিমের পরিমাণ বেশি। গতকাল মঙ্গলবার ভাটার সময় সকাল ছয়টার পর থেকে নমুনা ডিম দেখা যায় নদীর পাঁচ থেকে সাতটি স্থানে। এ ছাড়া বেলা ১১টার পর জোয়ারের সময় নদীতে ৮ থেকে ১০টি স্থানে মা মাছগুলো ডিম ছাড়া শুরু করে।

রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের খলিফারঘোনা, বাড়িঘোনা, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমেরঘাট, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া ও গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট এলাকায় প্রতিটি নৌকা এক থেকে দেড় বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন।

গতবারের মতো এবারও বেশ দেরি করেই নমুনা ডিম ছাড়া শুরু করেছে মা মাছগুলো। অন্যান্যবার এপ্রিলের শুরু ও মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে একাধিকবার নমুনা ডিম ছাড়ত মা মাছ। কিন্তু গতবারের মতো এবারও তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাবে হালদা নদীতে লবণাক্ততা বাড়ায় এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ডিম ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত নদীর রাউজানের আজিমেরঘাট, খলিফার ঘোনা, বাড়িঘোনা, হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট ও গড়দোয়ারা নয়াহাট ঘুরে ডিম সংগ্রহে কয়েক শ নৌকাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এসব নৌকায় ২০০ থেকে ৩০০ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে জাল ফেলে ডিম সংগ্রহ করেছেন।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, আজ ভোরে ভাটার সময় থেকে বেশ কয়েকটি স্থানে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে এটি পরিপূর্ণ ডিম নয়। সামনে পুরোদমে ডিম দেবে মা মাছ। তিনি আরও বলেন, এবারের আবহাওয়া ও নদীর পরিবেশ বিগত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে ভালো। তাই শিগগির পুরোদমে ডিম ছাড়লে পরিমাণ বেশি হতে পারে, এমন আশা তাঁর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সেন্টার ও চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমে হালদা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যেহেতু কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর নদীতেও জো (ডিম ছাড়ার মৌসুম) চলছে। তাই দুই-এক দিন নমুনা ডিম ছাড়া চালু থাকবে। এটা চলতে চলতে বজ্রবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ আরও বাড়লে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করবে।

ডিম সংগ্রহকারী রোশাঙ্গীর আলম, মুহাম্মদ শফি ও সাধন জলদাশ দুপুরে বলেন, রাউজানের আজিমেরঘাট, হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া, নয়াহাট এলাকায় এক থেকে দেড় বালতি করে প্রতি নৌকায় ডিম পাওয়া গেছে। এগুলো নমুনা ডিম। পুরোদমে ডিম ছাড়ার আগে এ রকম নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। কয়েক দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। সঙ্গে পাহাড়ি ঢল হলে মা মাছেরা পুরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করবে।

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা বলেন, নমুনা ডিম পাওয়ার খবরে এখন নদীর ৮ থেকে ১০ স্থানে সংগ্রহকারীরা অবস্থানে আছেন। সবাই কমবেশি নমুনা ডিম সংগ্রহ করছেন। মৎস্য বিভাগ সংগ্রহকারীদের দল গঠন করে হ্যাচারি ও নদীতে সহযোগিতা দিচ্ছে।

সর্বশেষ