ঢাকা   বৃহস্পতিবার
২৭ নভেম্বর ২০২৫
১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২, ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

রবি ফসল আবাদের শুরুতেই দেখা দিয়েছে টিএসপি সারের সংকট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

রবি ফসল আবাদের শুরুতেই দেখা দিয়েছে টিএসপি সারের সংকট

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সার সংকটে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ডিলারদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী সার না পাওয়ায় চাষাবাদ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। মূলত টিএসপি সার নিয়েই বেশি বেকায়দায় পড়েছেন তারা। ডিলাররা বলছেন, তারা কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করছেন। সারের কোনো ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছে উপজেলা কৃষি দপ্তরও।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলায় রবি ফসল আবাদের শুরুতেই দেখা দিয়েছে সারের সংকট। বিশেষত টিএসপি সার পাওয়াই যাচ্ছে না। যে কৃষকের টিএসপি প্রয়োজন ১০০ কেজি, তাঁকে দেওয়া হচ্ছে ১০ কেজি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সার সংকটের এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কৃষ্ণদিয়া গ্রামের ইউসুফ শিকদার বলেন, আমি এবার ছয় বিঘা জমিতে সরিষা ও ভুট্টার আবাদ করব। সোমবার নয়াবাড়ীর বিসিআইসি ডিলারের কাছে সার আনতে গেলে আমাকে ৫০ কেজির এক বস্তা পটাশ ও এক বস্তা ডিএপি এবং মাত্র ১০ কেজি টিএসপি সার দেওয়া হয়েছে। অথচ ছয় বিঘা জমিতে রবি ফসল আবাদ করতে আমার তিন বস্তা টিএসপি সারের প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী সার না পেলে আমার জমি অনাবাদি রাখতে হবে। ওই গ্রামের আরমান আলী বলেন, আমি টিএসপি সার না পেয়ে ঘুরে এসেছি।

উপজেলার কলাগারিয়া গ্রামের বারেক শেখ বলেন, আমি বরংগাইলের ডিলারদের কাছে সার আনতে গেলে আমাকে টিএসপি সার দেওয়া হয়নি। টিএসপি শেষ হয়ে গেছে বলে ডিলার নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন। কুদালিয়া গ্রামের রহমান আলী বলেন, টিএসপি সার আনতে গেলে ডিলাররা ১০ কেজির বেশি দিচ্ছেন না। আমি চার বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করব। সারের অভাবে আবাদ করতে পারছি না। দুবলিয়া গ্রামের হোসেন শেখ বলেন, আমি সাত বিঘা জমিতে সরিষা ও সবজির আবাদ করব। কিন্তু ডিএপি ও পটাশ সার পাওয়া গেলেও টিএসপি সার পাচ্ছি না। অথচ আমার বেশি দরকার টিএসপি। কিন্তু এই সার ১০ কেজির বেশি দিচ্ছে না। এটি না হলে রবি ফসল আবাদ করতে পারছি না। এ রকম অনেক কৃষক টিএসপি সার না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সারের সরকার নির্ধারিত দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা। সমপরিমাণ পটাশ এক হাজার এবং ডিএপির এক হাজার ৫০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক বলেন, টিএসপির চাহিদা বেশি। এ সুযোগে অনেক ডিলার টিএসপি সার বস্তাপ্রতি ৩০০-৫০০ বেশি টাকা নিয়ে কিছু ধনী কৃষকদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ কারণেই সংকট দেখা দিয়েছে। সাধারণ কৃষকের পক্ষে এভাবে বেশি দাম দিয়ে সার কেনা সম্ভব নয়। এই কৃষকরা বলছেন, সব সময়ই টিএসপির সংকট দেখা দেয়। এ জন্য ধনী কৃষকরা ইরি-বোরো চাষের জন্য বেশি দাম দিয়ে এখনই টিএসপি কিনে রাখছেন।

উপজেলার বিসিআইসি সার ডিলাররা টিএসপি সংকটের কথা অস্বীকার করেছেন। উথলী ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার আশরাফুল আলম রাজা বলেন, এ ইউনিয়নে এ বছর রবি ফসল আবাদ বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া, কিছু কৃষক ইরি-বোরো ধান আবাদ করার জন্য অগ্রিম কিনে রাখায় টিএসপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বরাদ্দ বেশি এলে কৃষকদের সার পেতে কোনো সমস্যা হবে না। 

বরংগাইলের সাব-ডিলার নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার কাছে কোনো কৃষক সার নিতে এসে খালি হাতে ফেরত যাননি। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু কিছু কৃষক সার নিয়েও অস্বীকার করছেন।

নালী বাজারের বিসিআইসি সার ডিলার খবির উদ্দিন বলেন, আমরা যে পরিমাণ বরাদ্দ পাচ্ছি, সে অনুযায়ী কৃষকদের সার দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের চাহিদা অনুসারে সার দিচ্ছি আমরা।

শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার বলেন, এ উপজেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ৬১ হেক্টর জমিতে সরিষা, ১৭ হেক্টরে গম, ৫১৬ হেক্টরে ভুট্টা, ২৯০ হেক্টরে পেঁয়াজ ও ৫০০ হেক্টর জমিতে রবিশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় চলতি মাসে সাতজন বিসিআইসি ডিলার ও ৬৩ জন সাব-ডিলারকে ডিএপি ৫৩ টন, টিএসপি ২৯৩ টন, পটাশ ৩৮৮ টন, ইউরিয়া ৮৯০ টন দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় টিএসপির মোট চাহিদা কত জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের মধ্যে সার বণ্টন করে দেওয়া হয়।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই। তবে টিএসপির পরিবর্তে ডিএপি সার বেশি দেওয়া হচ্ছে। কোনো ডিলার কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।