ঢাকা   বুধবার
১৮ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

১৫০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির আশা, রপ্তানি হবে তিন দেশে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৫ জুন ২০২৫

১৫০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির আশা, রপ্তানি হবে তিন দেশে

মিঠাপুকুর উপজেলার তেকানী গ্রাম। সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে রানীপুকুর-এরশাদ মোড় সড়ক ধরে গেলেই গ্রামটির অবস্থান। এখানকার প্রয়াত নফেল উদ্দিনের হাত ধরে প্রায় ২০ বছর আগে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসে। পরে সুস্বাদু ফলটির আবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এরপর সুনাম ছড়িয়েছে সারাদেশে।

রোববার থেকে বাজারে আসছে সারাদেশে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ‘হাঁড়িভাঙা’ আম। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এবার উপজেলায় ২৬ হাজার টন আম অন্তত ১৫০ কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হবে ২০ থেকে ৩০ টন। গত বছর ১ হাজার ২০৮ হেক্টরে উৎপাদন হয় ২৫ হাজার টন। বিক্রি হয়েছিল ১৩৫ কোটি টাকায়। তিন দেশে গতবারও রপ্তানি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাইকাররা বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। এবার অতিরিক্ত তাপের কারণে আম আগেই পাকতে শুরু করেছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে আসছে ফলটি। উপজেলার পশ্চিমে এঁটেলমাটিযুক্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হাঁড়িভাঙার বাগান রয়েছে। এখানে প্রচুর ফলন হয়। স্বাদে অনন্য এ আমের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। স্বাদে-মানে অনন্য এ আম ইতোমধ্যে ‘জিআই’ স্বীকৃতি পেয়েছে।

চেংমারী গ্রামে একটি বাগান কিনেছেন ব্যবসায়ী তাইফুর রহমান। এক একরের বাগানটি ২ লাখ টাকায় কিনেছেন তিনি। ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা এ ব্যবসায়ীর। ফুলচৌকি গ্রামের মাসুদ চৌধুরীর ১০ একর (চার হেক্টর) জমিতে বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে, চাহিদাও অনেক।’ সাজেদুল কবীর নামে আরেক জনের পাঁচ একরের বাগান রয়েছে। তিনিও ভালো দামে আম বিক্রির আশা করছেন।

শনিবার উপজেলার খোড়াগাছ, ময়েনপুর, চেংমারী ও বালুয়া মাসিমপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাগানে বাগানে আম পাড়ার (সংগ্রহ) ধুম পড়েছে। মালিক, ব্যবসায়ী, পাইকার, মৌসুমি বিক্রেতা, পরিবহন ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ জুনের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাঁড়িভাঙা বাজারজাত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৫ জুন থেকে বাজারজাতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার পাশেও গাছ রয়েছে। শুরুতে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁড়িভাঙার অন্যতম উৎপাদন এলাকা খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ বাজারে সবচেয়ে বড় হাঁড়িভাঙার হাট বসে। 

এ হাটে আমের আকার ও মানভেদে প্রতি মণ আম দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী মণ্ডল মিয়া, শাকিল আহমেদ ও মোকছেদুল ইসলাম জানান, তারা পদাগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে আম কেনেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। কখনও লাভ বেশি হয়, কখনও কম।

খোড়াগাছ এলাকার বাগান মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার বেশি গরম থাকায় আগেই আম পাকতে শুরু করেছে। এ কারণে পেড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।’ আখিরাহাট এলাকার বাসিন্দা ও দয়ারদান আম্রকাননের মালিক আব্দুস সালাম সরকারের ১০ একর জমিতে বাগান রয়েছে। পাশাপাশি লটকনসহ অন্য প্রজাতির আমের গাছও রয়েছে। এবার হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খরায় একটু ক্ষতি হয়েছে। দাম ভালো থাকায় পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

শেষ সময়ে যথেষ্ট বৃষ্টি হওয়ায় হাঁড়িভাঙা আমের আকার বড় হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন। তিনি বলেন, কৃষক ও বাগান মালিকদের আম সংরক্ষণ ও বিক্রির ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় কিছু আম রপ্তানি হবে। এখনও অর্ডার মেলেনি, কয়েকদিন পর পাওয়া যেতে পারে। ২৫ থেকে ৩০ টন আম রপ্তানি হবে।

ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, মিঠাপুকুরে উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আম স্বাদে, গুনে-মানে অনন্য। সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ আমের সুখ্যাতি বিদেশেও। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য তদারকি অব্যাহত আছে। সূত্র: সমকাল

সর্বশেষ