ঢাকা   রোববার
২৯ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৩ মুহররম ১৪৪৭

সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা 

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ২৭ জুন ২০২৫

সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা 

কুমিল্লায় দিন দিন কমছে বাণিজ্যিক পান চাষ। সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হওয়া সত্ত্বেও পান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন—পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া কৃষি বিভাগও এ বিষয়ে কোনো তদারকি করছে না।

ফলে লাভের পরিবর্তে গুনতে হচ্ছে লোকসান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে শত বছরের এই চাষাবাদ যেকোনো সময় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বুড়িচং ও বরুড়াসহ অধিকাংশ উপজেলার প্রায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পান হলেও গত এক বছরে তা ৮০ হেক্টরে নেমেছে।

সরেজমিন কুমিল্লার দেবিদ্বারের গুনাইঘর ও চান্দিনার হারং গ্রামে দেখা যায়, সড়কের পাশেই সারি সারি পানের বরজ। কেউ পান গাছ মুলি বাঁশের সঙ্গে সুতা দিয়ে বাঁধছেন। কেউবা ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ বিক্রির উদ্দেশ্যে তুলছেন পান।

গাছে গাছে দোল খাচ্ছে সবুজ পান পাতা, যা দেখে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে।  

দেবিদ্বারের গুনাইঘর এলাকার পানচাষি অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, আমাদের অনেক গাছ পঁচে যাচ্ছে, পান পাতাও পঁচে যায়। আমরা কোন ওষুধ ব্যবহার করব, এ ধরনের কোনো পরামর্শও কৃষি অফিস থেকে পাই না। এ ছাড়া পান গাছ লাগানো থেকে শুরু করে, বিক্রি উপযোগী হওয়া পর্যন্ত যে পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়, সে হারে লাভবান হওয়া যায় না। কৃষি বিভাগ থেকে যদি প্রণোদনা এবং সঠিক পরামর্শ পেতাম, তাহলে লোকসান গুনতে হতো না আমাদের।

পান চাষি নেপাল বলেন, বাপ-দাদার হাত ধরে এই পেশায় যুক্ত হয়েছি। গত ৪০ বছর ধরে আমি চাষাবাদ করছি। আগে এই চাষাবাদ থেকে প্রচুর অর্থ আয় হলেও এখন সেভাবে হয় না। সার ও ওষুধ থেকে শুরু করে সব কিছুর খরচ বেড়েছে। পরিশ্রম অনুসারে আয় না আসায় এখন অনেকেই পেশা বদলাতে শুরু করেছেন।

আরেক পানচাষি নিখিল চন্দ্র বলেন, কৃষি কাজে সরকার প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ, সার-বীজসহ নানা উপকরণ ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু পানচাষিরা এইসব কিছু থেকে বঞ্চিত। আমাদের সঙ্গে কেন এই বৈষাম্য? আমাদের দাবি- পানচাষিদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার যেন প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় কমবেশি পান চাষ হয়। তবে ধীরে ধীরে চাষাবাদ কমছে। আগে ১১৬ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও গত এক বছরে কমেছে ৩৬ হেক্টর। বর্তমানে ৮০ হেক্টর জমিতে পানচাষ চাষ হচ্ছে। আমরা নিয়মিত পান চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। অন্যান্য কৃষিকাজে পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হলেও পান চাষিদের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। আগামীতে তাদের সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, উৎপাদনশীল সেক্টরের সঙ্গে বিশাল একটা অংশ যুক্ত রয়েছেন। সেখান থেকে যদি তারা সরে যান, তা হলে বেকারত্ব বাড়বে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতেও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে জন্য সরকারের উচিত পানচাষিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থার করা এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে তাদের পাশে থাকা।  

সর্বশেষ