ঢাকা   শুক্রবার
১৩ জুন ২০২৫
২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

অকাল বন্যা: পানির ভেতর ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১২ জুন ২০২৫

অকাল বন্যা: পানির ভেতর ধান কাটতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক

অকাল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণ চলনবিলের প্রায় কয়েক শ হেক্টর জমির ধান। ধানের খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বেড়েছে শ্রমিকের দাম। চড়া দামেও সুবিধামতো শ্রমিক মিলছেনা। ফলে পানিতে নিমজ্জিত পাকা ধান কাটতে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

চলনবিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আত্রাই, নন্দকুঁজা, বেসানী, গুমানী-বড়াল নদীতে ভরা যৌবন দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলে এসব নদীর কিছু কিছু জায়গা উপচে পানি ঢুকে পড়েছে গুরুদাসপুর, সিংড়া, আত্রাই, তাড়াশ শাহজাদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার অন্তত ১৫টি বিলে।

বগুড়া ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, চলনবিলের বগুড়া জেলায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯০, নাটোরে ৫৭ হাজার ৪২৫, সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৫ ও পাবনার চাটমোহরে ৯ হাজার ১৩ এবং ভাঙ্গুড়ায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর এবং পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ার নিম্নাঞ্চলের কয়েক শ হেক্টর জমির ধান খেতে ৬ ইঞ্চি থেকে দেড় ফিট পর্যন্ত পানি জমেছে। এরমধ্যে শুধু শাহজাদপুর, তাড়াশ, চাটমোহর এবং ভাঙ্গুড়াতেই ১২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

কৃষকেরা বলছেন, গুরুদাসপুরের বিলশা, রুহাই, খুবজীপুর, সিংড়ার আয়েশ, বিয়েশ, তাড়াশের মাকরশন, কাটাবাড়ি, শাহজাদপুরের নন্দলালপুর, চাটমোহরের হান্ডিয়াল, সিদ্ধিনগর, দরাপপুর, স্থল, নবীন, পাকপাড়া, নিনাইচড়া ইউনিয়নের দিবগাড়ি, দিয়ালগাড়ি, মিয়াপাড়া, ভাঙ্গুড়া উপজেলার কয়ড়া, টয়রা, বাঁশবাড়িয়া, বাটুল, আদা বাড়িয়া, সাতবাড়িয়া বিলের ধান খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হাঁটু-কোমর পানি এবং কোথাও গলা পানিতে নেমে, পলিথিনের নৌকা আবার কেউ কেউ ডিঙি নৌকা নিয়ে এসব জমিতে দুর্ভোগ সয়ে ধান কাটছেন কৃষক।

তবে কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি বগুড়ায় ৯৮ শতাংশ, নাটোরে ৯৯, সিরাজগঞ্জে ৯৫ ও পাবনায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছেন চাষীরা।

তাড়াশের ধান চাষী আলতাফ হোসেন, ফরিদুলসহ অন্তত ১৫ জন কৃষক ইত্তেফাককে বলেন, সরিষা কেটে রবি মৌসুমে ব্রি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছিলেন তারা। নির্দিষ্ট সময়ের পরে ধান চাষ করায় পাকতে দেরি হয়েছে। উজানের পানি আর লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে ৫ জুন থেকে ধান খেতে পানি প্রবেশ শুরু হয়। বিলের নিচের খেতগুলো থেকে তারা অনেক কষ্টে ধান কেটে পলিথিনের নৌকায় বহন করে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। বিলের কোথাও কোথাও হাঁটু-কোমর আবার কোথাও গলা পানিতে নেমে ধান কাটতে হচ্ছে। ঈদের আমেজ থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। চড়া দামে সুবিধামতো ধান কাটা শ্রমিক মিলছেনা।

পানিতে নিজের ১২ বিঘার বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কথা বললেন হান্ডিয়ালের কৃষক নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, তার ১২ বিঘায় ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে খেত। শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে দেরি হওয়ায় ২০ মনের ফলন ১০ থেকে ১৫ মণে নেমে আসার শঙ্কা তার।

এই অঞ্চলের কৃষক তারিকুল ইসলাম, মানিক মিয়া ও আক্তার হোসেন জানান, ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকাতেও শ্রমিকেরা পানিতে নেমে ধান কাটতে চাইছে না। আবার বেশি পানি হওয়ায় হাভেস্টার মেশিনেও ধান কাটা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই জমিতে খড় রেখেই তারা কোনোমতে ধান ঘরে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাছাড়া বন্যা আসায় প্রতি বিঘা ধান কাটা, মাড়াই এবং পরিবহনে খরচ বেড়ে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে অন্তত ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। ফলে এ বছর ধানে বিঘায় তাদের ৫ থেকে ৭ হাজার লোকসানের শঙ্কাও রয়েছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, চলনবিলের কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ধান খেত। তবে ধান নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা নেই। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ধান কাটা মেশিন দিয়েও কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। তাছাড়া গতকাল থেকে যমুনা ও এর শাখা নদীর পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে। সূত্র: ইত্তেফাক