ঢাকা   মঙ্গলবার
১৮ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

বরাক নদীর নাব্য সংকট, ব্যর্থ প্রকল্প

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৮, ৯ মার্চ ২০২৫

বরাক নদীর নাব্য সংকট, ব্যর্থ প্রকল্প

হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদীর জেলা মৌলভীবাজারের বহু জলাশয় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, কুশিয়ারা থেকে জন্ম নেওয়া সদর উপজেলার গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বরাক নদী।

কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। ৭ বছর আগের অপরিকল্পিত খনন কার্যক্রমে টাকার অপচয় হলেও প্রাণ ফেরেনি নদীতে। উল্টো এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচর, বর্ষায় জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চলের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত বরাক নদী। কুশিয়ারা তীরের বাহাদুরপুর নামক স্থানে বরাক নদী নাম ধারণ করে। নদীর একটি শাখা হবিগঞ্জের ফুটারচর নামক স্থানে ফের দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা বিজনা নদীতে পতিত হয়েছে। অপরটি শাখা বরাক নাম ধারণ করে নবীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে ফের কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।

কালের পরিক্রমায় বরাক নদীর স্রোতধারা সচল রাখার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর উপজেলা অংশের ৮ কিলোমিটার অংশ খননের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালে নদীর দুই তীরের বৃহৎ অংশ ছেড়ে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁনপুর পর্যন্ত বরাক নদী খনন করা হয়। বাহাদুরপুরের উৎপত্তিস্থল পলিস্তর জমে অনেক উঁচু থাকায় কুশিয়ারা থেকে বর্ষা মৌসুমেই স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবেশ করতে পারে না। শুষ্ক মৌসুমে সংযোগস্থল খা খা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় অনেকটা অংশ ছেড়ে দিয়ে নদীর ৩০-৪০ ফুট করে খননের আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে ছেড়ে দেওয়া অংশে স্থানীয়দের অনেকে দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন বরাক তীরের নসিরপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম।

তিনি আরও জানান, ২০-২৫ বছর আগেও এ নদী দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হতো। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত হাওর আর বিলে। নদীর বেহাল দশায় জমিতে পলিবাহিত পানি ওঠে না এখন, আগের মতো ফসল উৎপাদনও হয় না।

খলিলপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মুজাহিদ আলী জানান, পুরো বরাক নদী খনন না করায় বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই চাঁনপুর, কাটারাই, আলাপুর, মুকিমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ একর জমিতে একেক মৌসুমে কয়েকবার করে চারা লাগাতে হয়। তিনি আরও জানান, এ নদীর নিম্নাঞ্চল খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হতো।

স্থানীয় খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে বরাকের নিম্নাঞ্চল খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণে শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি আবেদন করা হবে। তিনি জানান, এরই মধ্যে সদর উপজেলা ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হয়েছে। এর আগে পানি নিষ্কাশনে ওই এলাকার ফুটারচর গ্রামে নির্মিত বাঁধ কেটে দেওয়ার সুপারিশ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ জানান, নদী ভরাট করে অনেক স্থানে রাস্তা, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু জায়গা খনন করা যায়নি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন এলাকার বরাক নদীর অংশ খনন করা হলে পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হবে।

এগ্রি২৪.টিভির বিদেশ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা সিভি  ও নিউজ পাঠান agri24.tv@gmail.com এই ইমেইলে।

সর্বশেষ