ঢাকা   শনিবার
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ শা'বান ১৪৪৬

পদ্মায় অসাধু জেলেদের অভয়ারণ্য, চলছে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা নিধন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০৮:৪২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পদ্মায় অসাধু জেলেদের অভয়ারণ্য, চলছে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা নিধন

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে যত্রতত্র নিধন করা হচ্ছে জাটকা। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা পদ্মা নদীতে কারেন্ট জাল ছাড়াও বড় বড় বেড়জাল দিয়ে অবাধে নিধন হচ্ছে জাটকা।

সম্প্রতি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদী হয়ে উঠেছে যেন অসাধু জেলেদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কারেন্ট জাল আর ট্রলার নিয়ে পদ্মার বুক জুড়ে চোষে বেড়াচ্ছে শত শত জাটকা শিকারি।

সকাল হলেই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জাটকা ইলিশ। আর দেশের এ মৎস্য সম্পদ ধ্বংসযজ্ঞ দেখেও না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চলতি শুষ্ক মৌসুমে উপজেলা পদ্মা নদীর জলমহালের প্রচুর পরিমাণ জাটকা ইলিশ দেখা দিয়েছে। পদ্মায় বড় ইলিশের দেখাই মিলছে না কিন্তু কারেন্ট জাল ফেললেই উঠে আসছে শুধু জাটকা।

অত্র উপজেলায় রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত শ পেশাদারী জেলে। এরা প্রত্যেকে একটি ছোট্ট ট্রলার ও কারেন্ট জাল নিয়ে পদ্মা নদীতে রাতভর নিধন করে চলেছে জাটকা ইলিশ। 

এ ছাড়া এলাকার কিছু দাদন ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জেলেদের এনে তাদের মোটা অংক দাদন দিয়ে বড় বড় বেড়জাল ও দু’টি করে ট্রলার বানিয়ে দিয়েছেন। এসব অসাধু জেলেরা পদ্মা নদীর কয়েক কি. মি. এলাকার জলমহাল জুড়ে বেড়জাল দিয়ে ঘিরে রাখার পর আবার দু’টি ট্রলারের মাধ্যমে ৮/১০ জন জেলে জালদড়ি টেনে উঠিয়ে মনে মন জাটকা ইলিশ আটক করে চলেছে।

অনেকে আবার সখ করেও কারেন্ট জাল দিয়ে পদ্মা নদীতে জাটকা নিধন করে চলেছে।

সোমবার দুপুরে উপজেলা পদ্মা নদীর দিয়ালা গোপালপুর মৌজার জলমহালে গিয়ে দেখা যায়, পেশাদারী জেলেদের সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলের বসতি পরিবারের অনেক গৃহস্থ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ আটক করে চলেছে।

এদের মধ্যে পদ্মা নদীর চরঝাউকান্দা মৌজার এক বসতি ইব্রাহিম বেপারী (৪৮) বলেন, ‘ভাই ঘর গৃহস্থালীর ফাঁকে একটু সময় পাইছি, তাই জালদড়ি ও বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা নদীতে জাটকা ইলিশ ধরে খুব আনন্দ পাচ্ছি। এ বছর জাটকা নিধনের বিরুদ্ধে পদ্মায় কোনো অভিযান হয় নাই বিধায় সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেও জাটকা আটক করছে বলে জানায়’।

আরেক জাটকা শিকারি নাছের মন্ডল (৪৩) জানায়, ‘কিছুদিন ধরে পদ্মায় জাল ফেললেই শুধু জাটকা ইলিশ উঠে।

অন্য কোনো মাছই উঠে না। তাই জাটকা ধরে বিক্রি না করলে খামু কী?’

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা পদ্মা নদীর দিয়ারা গোপালপুর মৌজার জলমহালে, চর কল্যাণপুর মৌজার জলমহাল, চর কালকিনিপুর, চর তাহেরপুর, চর মির্জাপুর, চর শালেপুর, উত্তর শালেপুর, ভাটি শালেপুর, চর হাজীগঞ্জ মৌজা, চর মোহনমিয়া, মাঝিকান্দি, চরহরিরামপুর, চর ঝাউকান্দা, চর হোসেনপুর, জাকেরের সুরা মৌজা, টিলারচর মৌজা, মাথাভাঙ্গা ও চর মঈনূট চর মৌজার বিশাল জলমহলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চালানো হচ্ছে জাটকা নিধনের মহড়া। এসব আটককৃত জাটকা ইলিশ বিভিন্ন বাজারের জেলেদের নির্দিষ্ট আড়ৎদারের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে থাকে। বিক্রিত মাছের ৬০ ভাগ জেলেরা আর ৪০ ভাগ টাকা দাদন দাতা আড়ৎদাররা নিয়ে থাকে বলে জানা যায়।

চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য অফিসার নাঈম হাসান বিপ্লব বলেন, ‘খুব শিগগিরই উপজেলা পদ্মা নদীতে জাটকা নিধনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দেশে জাটকা সংরক্ষণের জন্য আমরা স্থানীয় সাংবাদিকসহ সবার সহায়তা কামনা করছি’।

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুন জানান, ‘আমার নতুন পোস্টিং হয়েছে। গতকাল প্রথম যোগদান করেছি। অচিরেই পদ্মায় জাটকা নিধন বন্ধ করা হবে’।

সর্বশেষ