খেজুররসের প্রসঙ্গ উঠলেই যশোরের নাম চোখের সামনে ভাসে। স্বাদে, ঘ্রাণে ও গুণে অনন্য যশোরের খেজুররস এখন শুধু স্থানীয় নয়, বরং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছেছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। শীতের আগমন মানেই গাছিদের নতুন ব্যস্ততা, পাটালি ও গুড় তৈরির ব্যস্ততা। গত দেড় বছর আগে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে যশোরের খেজুরের গুড়। তা ১০০ কোটি টাকার বাজার তৈরি করেছে, যা ঘিরে গ্রামীণ অর্থনীতি জেগে উঠেছে নতুন করে।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, যশোর জেলায় রয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি খেজুরগাছ। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছ তিন লাখ সাত হাজার ১৩০টি। এসব গাছ থেকে তিন কোটি ৭১ লাখ লিটার রস এবং দুই হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এগুলো উৎপাদন করা গেলে তার বাজারমূল্য সরকারি হিসাবে দাঁড়াবে প্রায় ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তবে চাষিদের মতে, সরকারি হিসাবের চেয়ে বাজারমূল্য দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে।
চৌগাছা উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘কার্তিক মাস শুরু হলেই আমরা গাছ ছেঁটে রস আহরণের প্রস্তুতি নিই। শীতে এটাই আমাদের মূল আয়ের উৎস।
প্রতি ভাঁড় কাঁচা রস ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, দানা গুড় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।’
যশোরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খেজুরগাছ রোপণের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চৌগাছা, বাঘারপাড়া, মণিরামপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় রোপণ কার্যক্রম চলছে। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় নতুন করে ৫০ হাজার খেজুর চারা রোপণ করা হয়েছে।
খেজুররস ও গুড়ের জনপ্রিয়তা এখন অনলাইন বাজারেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অনলাইনে আগাম অর্ডার দিচ্ছেন। স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘কেনারহাট’-এর উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ছয় হাজার ৫০০ কেজি পাটালি গুড়ের চাহিদা থাকলেও আমরা সরবরাহ করতে পেরেছিলাম মাত্র দুই হাজার কেজি। এ বছর শীত ভালো থাকলে উৎপাদন বাড়বে, আর ব্যবসাও জমবে।’
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের হাতে আবারও জেগে উঠছে ব্যস্ততার মৌসুম। রসের মিষ্টি ঘ্রাণে ভরে উঠছে গ্রাম, বাজার আর অনলাইন অর্ডারের তালিকা। যশোরের মানুষের জন্য খেজুররস শুধু পণ্য নয়, এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির এক মিষ্টি প্রতীক।























